কাজীর গরু কাগজে আছে গোয়ালে নাই!
সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রতিদিন চোখ দিতেই ‘ধর্ষন’ খবর।
বাংলাদেশের নৌকা, বাস, লঞ্চ, ঘর, ফ্ল্যাট, অফিস, হোটেল, মাদ্রাসা, কোচিং সেন্টার, স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি কক্ষ, ধান পাট আখ খেত, কলাবাগান, পার্ক রাস্তা, বাগান, জঙ্গল সহ ৫৫ হাজার বর্গমাইলের এমন একটি যায়গা বাদ নেই যেখানে ধর্ষন হয়নি!
বাংলাদেশে ৬ মাসের নবজাতক, শিশু-কিশোরী, বালিকা, প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে, পুত্রবধু, মা, সত্তুরোর্ধ বৃদ্ধা সহ এমন কোনো বয়সী শিশু ও নারী নেই যে ধর্ষিত হয়নি!
বাংলাদেশে শিক্ষিত অশিক্ষিত পাগল ভারসাম্যহীন, প্রতিবন্ধী, শিশু, বয়স্ক, বৃদ্ধা, বেপর্দা, পর্দানশীন, হিজাবী বোরকাওয়ালী, স্টুডেন্ট, টিচার, গৃহপরিচারিকা, গৃহবধূ সব বয়সী সব পেশার সব শ্রেণির স্ত্রীলিঙ্গের মানুষ ধর্ষিত হয়েছে!
ডয়চে ভেলে, ৬ অক্টবর ২০১৯ এর তথ্যমতে ধর্ষনে শীর্ষ দেশ হলো- সাউথ আফ্রিকা, বোতসোয়ানা, লেসোথো, সোয়াজিল্যান্ড, বারমুডা, সুইডেন, সুরিনাম, কোস্টারিকা, নিকারাগুয়া, গ্রেনাডা। আর সমগ্র বিশ্বে ধর্ষনে বাংলাদেশের অবস্থান ৪০ তম।
তবে যে হারে বাংলাদেশে ধর্ষনের পরিমান বাড়ছে তাতে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হতে হয়তো আর বেশিদিন নেই! ২০২০ সালের শুরুতে মাত্র ১০ দিনে বাংলাদেশে ধর্ষন হয়েছে ১২৮ টি।
ছোট্ট একটা পরিসংখ্যান তুলে ধরছি। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে-
৫৪০০ নারী এবং ৮১৫ টি শিশু ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয় এবং ধর্ষণের কারণে ১২ শিশু এবং ২৬ জন নারী মারা যান। [বাংলাদেশ পুলিশ]
১৪১৩ জন নারী ও শিশু ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হন। [আসক]
৯০২ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। [মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন]
১৩৮৩ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হন। [বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম]
কিন্তু ২০২০ সালে এখন অবধি ০৯ মাসে ঠিক কতটি ধর্ষন হয়েছে সেই পরিসংখ্যান পাইনি। ২০১৮ সালের চেয়ে ২০১৯ সালে ধর্ষন বেড়েছিল ৭০%। যেহেতু উর্ধগতি তাই এ বছর আগের সংখ্যা ছাড়িয়ে যেতে পারে; তবে আমি চাইনা বাড়ুক, আমি চাই ধর্ষন শূন্যের কোটায় নেমে আসুক।
বিভিন্ন সংঘঠনের তথ্য গড়পরতা থাকতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে পরিসংখ্যানের চেয়ে বাস্তবে এই সংখ্যা অনেক বেশি। কারন সবগুলো খবরে আসেনা। অনেক ভুক্তভোগী প্রকাশ করেন না।
ক্রমাগত যে ধর্ষন বেড়েই চলছে এর কারন কী। দেশে কি আইন নেই? হ্যা আছে।
ধর্ষন বিষয়ে বাংলাদেশ সংবিধান কি বলে?
সংজ্ঞাঃ
যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ষোল বৎসরের অধিক বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতি ছাড়া বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলক ভাবে তার সম্মতি আদায় করে, অথবা ষোল বৎসরের কম বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলে গণ্য হবেন।
শাস্তিঃ
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০, এর ৯ ধারা মতে ধর্ষেনের শাস্তি সমূহ
১. যদি কোন পুরুষ কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।
২. যদি কোন ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ বা উক্ত ধর্ষণ পরবর্তী তার অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষিতা নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে তা হলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অন্যুন এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।
৩. যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ফলে উক্ত নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে বা তিনি আহত হন, তা হলে ঐ দলের প্রত্যেক ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অন্যুন এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।
৪. যদি কোন ব্যক্তি কোন নারী বা শিশুকে-
(ক) ধর্ষণ করে মৃত্যু ঘটানোর বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন;
(খ) ধর্ষণের চেষ্টা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক দশ বৎসর কিন্তু অন্যুন পাঁচ বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।
(৫) যদি পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে কোন নারী ধর্ষিত হন, তা হলে যাহাদের হেফাজতে থাকাকালীন উক্তরূপ ধর্ষণ সংঘটিত হয়েছে, সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ ধর্ষিতা নারীর হেফাজতের জন্য সরাসরিভাবে দায়ী ছিলেন, তিনি বা তারা প্রত্যেকে, ভিন্নরূপ প্রমাণিত না হলে, হেফাজতের ব্যর্থতার জন্য অনধিক দশ বৎসর কিন্তু অন্যুন পাঁচ বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন
শিশু ও নারী নির্যাতন আইন দেখে নিশ্চয় আপনার মনে প্রশ্ন জাগছে, যাবজ্জীবন ও মৃত্যুদণ্ডের মত এতো কঠিন আইন ও শাস্তি থাকার পরেও ধর্ষন কেন হয়? দিন দিন ধর্ষন বাড়ছে কেন? পুরুষ নামক হিংস্র জানোয়ার গুলো এতো ধর্ষন করে কেন? গত বছর যে ৬২১৫ টি শিশু ও নারী ধর্ষনের মামলা হয়েছিল তার কতটি যাবজ্জীবন, মৃত্যুদণ্ড হয়েছে?
আপনি যদি এতোসব প্রশ্নের উত্তর চান তাহলে সোজা উপরে যান। আর এই লেখার প্রথম লাইনটি আবার পড়ুন!
লেখক
Zead Mollik (ZEAD)
শিক্ষার্থী, ইসলাম ইতিহাস বিভাগ,
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যাল।