কনে পরিবার থেকে যৌতুক নেয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। যুগ যুগ ধরে যৌতুক প্রথা চলে আসলেও এখন যৌতুক কমেছে। কিন্তু বেড়ে গেছে কনেপক্ষের কাবিন!
কাবিন তথা দেনমোহর হওয়া উচিৎ ছেলে যে পরিমান পরিশোধ করার সামর্থ রাখে সেই পরিমান। কিন্তু নিয়ম উল্টা। এখন সর্বনিম্ন ৫ লাখ থেকে শুরু হয়। ১০-১৫ লাখ টাকা কাবিন ছাড়া আজকাল তেমন বিয়ে-ই হয়না।
বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে চাকরির বাজারের বেতন কাঠামো দেখুন, একজন অনার্স পড়ুয়া এবং গ্রাজুয়েটদের প্রবেশকালীন বেতন ধরা হয় ১২ হাজার থেকে ১৮-২০ হাজার। ১২-২০ হাজার বেতনভুক একটা ছেলের ঘাড়ে ১০-১৫ লাখ টাকার কাবিন চাপিয়ে দেন। যা ছেলেটি দিতে পারেনা। আর ক’জন ই বা বিসিএস ক্যাডার হতে পারে। বাসর রাতে বৌ বাধ্য করে দেনমোহরের জন্য মাফ চাইতে।
পয়েন্ট টু বি নোটেড- দেনমোহর আপনি মওকুফ করে দিলেন। কিন্তু সামান্ন ঝগড়া লাগলেই বাপের বাড়ি চলে যান… ১৫ লাখ কাবিনের জোড়ে নারী নির্যাতনের মামলা দেন। (নারী নির্যাতন মামলার ম্যাক্সিমাম ই ভুয়া) ডিভোর্স হলে উক্ত কাবিনের টাকা নেন। দেনমোহর যদি মওকুফ ই করে দিলেন তাহলে সেটা আবার দাবী করেন কিভাবে?
একজন মানুষের সাথে বনিবনা করে সংসার করতে পারলেন না; তার সাথে আর এক মুহূর্ত নয়, স্বামীর ঘরের ভাত আর খাবেন না। তাহলে সেই স্বামীর টাকা নিয়ে পরবর্তীতে খান কিভাবে লজ্জা করেনা? বড় অংকের কাবিন ডিভোর্স এবং টাকা আদায় এটা একটা বিজনেস!
অনেকেই বলবেন শরিয়া অনুযায়ী স্ত্রী দেনমোহরের টাকা পাবে। আমিও বলি অবশ্যই পাবে। দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে প্রতিটা স্বামী বাধ্য। কিন্তু যে দেনমোহর বাসর রাতে মওকুফ করলেন সেটা আবার মামলা করে আদায় করলেন এ কেমন বিচার? এটা তো থু থু ফেলে চেটে খাওয়ার সমান।
ধরুন ব্যাংক ঋণ নিলেন। ব্যাংক আপনার ঋণ মওকুফ করে দিল। এখন ব্যাংক যদি আবার সেই ঋণের টাকা চায় সেটা কি আদৌ যৌক্তিক? (এখানে ব্যাংকের যায়গায় স্ত্রী আর ঋণীর যায়গায় স্বামী)
কনেপক্ষ থেকে যৌতুক নেয়া যদি দণ্ডনীয় অপরাধ হয় তাহলে অসমর্থ বরপক্ষ থেকে লাখ লাখ টাকা কাবিন কি জুলুম অত্যাচার নিপীড়ন অপরাধ নয়? একটা ছেলেকে সারাজিবন বৌয়ের কাবিনের খুটা শুনে বাঁচতে হয়। বার বার বাপের বাড়ি যাবার হুমকিতে থাকতে হয়। এটাও তো পুরুষ নির্যাতন!
যৌতুক যদি হারাম হয় অসমর্থবান পুরুষের কাছে কয়েক লাখ টাকার কাবিন কি হালাল?
বাস্তবতা হলো মেয়ে এবং মেয়ের পরিবার মোটা অংকের কাবিনকে ‘নিরাপত্তা’ মনেকরে। খোঁজ নিয়ে দেখুন, বৌয়ের উপর যেখানে অশান্তি নির্যাতন সেখানে কোটি টাকার কাবিনও নিরাপত্তা দিতে পারেনি। স্বামী বা বৌ একে অপরের অত্যাচার যখন সহ্য করতে পারেনা তখন এমনিতেই বলে “খয়রাত লাগবেনা কুত্তা ফিরাও”!
বিশ্বের ১নম্বর ধনী অ্যামাজন.কম এর জেফ বেজোস। দীর্ঘ ২৫ বছরের সংসার তাদের। এক নম্বর ধনীর বৌ হয়েও নিজেকে সুখী ভাবতে পারেননি স্ত্রী ম্যাকেঞ্জি। চুক্তিতে বিচ্ছেদের পথে হাটেন তারা। ম্যাকেঞ্জি ১৯.৭ মিলিয়ন শেয়ার; অ্যামাজনের ৪% মালিকানা পান। ৩৮ বিলিয়ন ডলারে জেফ বেজোস এর ডিভোর্সের দফারফা হয়।
চিন্তা করুন একবার! মোটা অংকের কাবিন কি নিরাপদ? এই সমাজে প্রেম জাস্টফ্রেন্ড বিয়ে বহির্ভূত ফিজিক্যাল রিলেশন সহজ।আবাসিকে ভোগ মাত্র ৪০০-৫০০ টাকার ব্যাপার। রাস্তা পার্ক ওভারব্রিজে রাতপরীদের সাঙ্গলীলা আরও কম টাকায় আরও সহজ; শুধু “বিয়ে” কঠিন!
দেনমোহর ফরয। ইসলামে স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক। তবে স্ত্রী চাইলে কিছু অংশ অথবা সম্পূর্ণ দেনমোহর মওকুফ করে দিতে পারেন। এতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু আমি মনেকরি, দেনমোহর এমন একটা পরিমান ধার্য করা উচিৎ যেটা খুব সহজেই স্বামী তার স্ত্রীকে পরিশোধ করতে পারে। কারও মওকুফ আর ঋণের তলে থাকা উচিৎ না। আর দেনমোহর পরিশোধ না করলে সেই সম্পর্ক আর শুদ্ধ সম্পর্ক থাকেনা। স্বামী শারিরিক কর্তৃত্ব তখন হয়ে যায় ব্যাভিচার। আর ইসলামে ব্যাভিচার ব্যাভিচারিনীদের জন্য অবধারিত ভয়াবহ শাস্তি। বিয়ে করলেই সম্পর্কের বৈধতা হয়না যতক্ষন পর্যন্ত না আপনি ধর্মীয় বিধিবিধান সম্পূর্ণ পূরন করেন।
যুব সমাজের ঘাড়ের উপর থেকে কাবিনের পাহার নামান। বিয়েকে সহজ করুন। ছেলেদের আয়ের ভিত্তিতে সামর্থ বিবেচনা করে কাবিন দেনমোহর নির্ধারন করুন।
আল্লাহ্ জগতের সকল যুবকের বিয়ে সহজ করে দাও শুরুটা করো আমাকে দিয়ে।
লেখক
জিয়াদ মল্লিক,
শিক্ষার্থী, ইসলামিক বিভাগ,
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।