“প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে” স্ত্রীর করণীয় কি?
আইন অনুযায়ী এক স্ত্রীর বর্তমানে আরেকটি বা একাধিক বিয়ে করাকে বহুবিবাহ বলে এবং বাংলাদেশে শতকরা ১০% বহুবিবাহ হয়ে থাকে।
মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১- অনুযায়ী বহুবিবাহ বৈধ একটি বিষয় তবে বহুবিবাহ করার জন্য স্বামীকে বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের মধ্যে শেষ স্ত্রীর অনুমতি এবং এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে আরেকটি বিয়ে করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করতে হবে।
মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১-এর ৬ ধারা মতে, দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে সালিসি পরিষদের কাছে অনুমতি না নিলে বিয়ে নিবন্ধন হবে না। অনুমতির জন্য ফি দিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে হবে এবং আবেদনের প্রেক্ষিপ্তে বিয়ের অনুমতি দিতে যেসব বিষয়ের প্রতি বিবেচনা করা হবে তার মধ্যে অন্যতম হলোঃ
• বর্তমান স্ত্রী বন্ধ্যা কিনা;
• শারীরিক মারাত্মক দুর্বলতা,আছে কিনা;
• দাম্পত্য জীবন সম্পর্কিত শারীরিক অযোগ্যতা আছে কিনা;
• দাম্পত্য অধিকার পুনর্বহালের জন্য আদালত থেকে প্রদত্ত কোনো আদেশ বা ডিক্রি বর্জন করেছে কিনা; বা
• মানসিকভাবে অসুস্থতা কিনা ইত্যাদি বিষয়।
আপনার স্বামী যদি অনুমতি ছাড়া ২য় বিবাহ করে তাহলে আপনি যা করতে পারেনঃ
• আপনার স্বামী যদি সালিসি পরিষদের অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করেন, তবে আপনি অবিলম্বে দেনমোহরের সম্পূর্ণ টাকা তৎক্ষণাৎ দাবী করতে পারেন এবং স্বামী তা দিতে বাধ্য থাকবে।
• যদি আপনার বিবাহ রেজিস্ট্রিতে তালাকের অনুমতি না থাকে, তাহলে আদালতে মামলা করে বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারেন।
• আপনি (প্রথম স্ত্রী) আলাদা বসবাস করেও ভরণপোষণ পাবেন এবং আপনার সাথে বসবাসরত নাবালক সন্তানদের ভরণপোষণ দিতে বাবা আইনত বাধ্য।
• ভরণপোষণের পাশাপাশি আপনি ও আপনার সন্তানরা উত্তরাধিকারীর অধিকার লাভ করবেন।
• এছাড়াও অভিযোগে স্বামী দোষী সাব্যস্ত হলে মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ,১৯৬১-এর ৬ (৫) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে এবং এক বছর পর্যন্ত বিনা শ্রম কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
• এছাড়াও দণ্ডবিধি আইন ১৮৬০-এর ৪৯৪ ধারার বিধানমতে, স্বামী যদি স্ত্রীর জীবনকালে পুনরায় বিয়ে করেন তবে সেই ব্যক্তি যে কোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে যার মেয়াদ সাত বছর পর্যন্ত হতে পারে, তদুপরি অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
তবে মনে রাখতে হবে, প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করলে দ্বিতীয় বিয়েটি অবৈধ হয়ে যাবে না। কিন্তু স্বামীকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।
মোঃ আরিফ হুসাইন
শিক্ষার্থী
আইন বিভাগ
উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়