বর্তমানে নিউজ চ্যানেল এবং পত্রিকা খুললেই প্রতিনিয়ত চোখে পড়ে- মায়ের পরকীয়ায় বলি শিশু সন্তান , শ্যালিকার সঙ্গে পরীকায় জেরে শিশু হত্যা স্ত্রীর , পরকীয়া প্রেমিকের হাতে স্বামী খুন, ৩ মাস পর মিলল লাশ ।
পরকীয়া (ইংরেজি: Adultery বা Extramarital affair বা Extramarital sex ) হল বিবাহিত কোন ব্যক্তির (নারী বা পুরুষ) স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তির সাথে বিবাহোত্তর বা বিবাহবহির্ভূত প্রেম, যৌন সম্পর্ক ও যৌন কর্মকান্ড।
Cambridge Dictionary অনুযায়ী পরকীয়া হল: Sex between a married man or woman and someone he or she is not married to.
দিন দিন বাংলাদেশে পরকীয়া বেড়েই চলছে এবং এটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে ভিন্ন ভিন্ন অপরাধ। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একটি জরিপে এমন একটি চিত্র পাওয়া গেছে, স্বামীর পরকীয়ার কারণে ৮০ শতাংশ স্ত্রীরা বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করে থাকেন অন্য একটি গবষেণায় দেখা গেছে পরকীয়ায় বেশি জড়াচ্ছেন মধ্যবয়সীরা এবং তাদের মধ্যে এগিয়ে নারীরা ।
এ ব্যাপারে নারী বা পুরুষ কে দায়ী তা বলা মুসকিল৷ একজন পার্টনার পরকীয়ায় জড়িয়ে গেলে, অন্যজন তার প্রতি প্রতিশোধ নেয়ার জন্যও অনেক সময় নিজেকে অন্য আরেকজনের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেন। তবে পরকীয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের সন্তান।
পরকীয়ার প্রথম কারন হতে পারে স্বামী অথবা স্ত্রী একে অপরকে পর্যাপ্ত সময় না । ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একটা মানসিক দূরত্ব সৃষ্টি হয় । স্বামী অথবা স্ত্রী এমন কাউকে খুজতে থাকে যার সাথে তার একাকীত্ব ঘুচে যায় । এমন কাউকে খুজতে থাকা থেকেই পরকীয়ার সূত্রপাত হয়।
ছেলে ও মেয়েরা কিন্তু একই কারণে পরকীয়ায় জড়ায় না। মেয়েরা মূলত পুরুষের বুদ্ধিবৃত্তিক, আবেগীয় ও অর্থ সম্পদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে এবং শারীরিক চাহিদা থেকে পরকীয়ায় জড়ায়। অন্যদিকে পুরুষরা সাধারণত বহুগামী মানসিকতা থেকে পরকীয়ায় জড়িয়ে থাকে।
অফিস সহকর্মী কিংবা বন্ধুবান্ধবদের পরকীয়ার গল্প শুনতে শুনতেই অনেকে নিজের জীবনেও সেই উত্তেজনা খুঁজতে গিয়ে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। আমেরিকার নিউ ওমেন ম্যাগাজিনের জরিপে জানা যায় চাকরিজীবী বিবাহিত নারীরা তাদের কর্মস্থলেই ‘লাভার’দেরসঙ্গে দেখা সাক্ষাত করে থাকেন। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে জানা যায় যে, ২৫ শতাংশ পুরুষ পরকীয়া করছে এবং ১৭ শতাংশ নারী তাদের স্বামীদের প্রতি বিশ্বস্ত নয়
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের চাইল্ড অ্যাডোলসেন্ট ও ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, অনেক সময় মানসিক সমস্যার কারণেও মানুষ পরকীয়ায় জড়াতে পারে। যাদের মধ্যে বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার আছে, তাঁদের পরকীয়ার সম্পর্কে জড়ানোর প্রবণতা দেখা যায়। তাঁরা কোনো কিছুর মধ্যে স্থিরতা খুঁজে পায় না।
সঙ্গীর উদাসীনতা ও দূরত্বের কারণেও অনেক সময় মানুষ পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক সময় স্বামী-স্ত্রী বাস্তবতার কারণে, কাজের কারণে হয়তো দূরে চলে যায়। তখন তাঁদের মধ্যে পরকীয়ার আগ্রহ বাড়ে।
অনেক সময় পশ্চিমা সংস্কৃতির ধাঁচ নিজেদের
মধ্য প্রয়োগের চেষ্টা করে , তখন পরকীয়া বাড়ে। এ ছাড়া স্বামী স্ত্রীর দ্বন্দ্ব, দূরত্ব ইত্যাদির জন্যও
অন্যের প্রতি আগ্রহ, আসক্তির ঘটনা ঘটে।
পরকীয়া দিন দিন বেড়ে যাওয়ার অন্য একটি
কারণ পরকীয়া অপরাধের স্ট্রিক কোন আইন না থাকা শুধুমাত্র দণ্ডবিধির ৪৯৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী এই অপরাধের শাস্তি সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের ব্যবস্থা রয়েছে এবং তা শুধুমাত্র পুরুষ এর জন্য নারীর জন্য নয় । বর্তমানে মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধ কমে যাওয়াও পরকীয়া বেড়ে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণকেননা পৃথিবীর প্রায় সকল ধর্ম পরকীয়াকে অন্যায় ও অপরাধ মনে করে।
পরিশেষে এতটুকু বলা যেতে পারে , স্বামী ও স্ত্রীর পরস্পরের পরিপূর্ণ অধিকার আদায়, সামাজিক ও ধর্মীয় মুল্যবোধ, বিবাহে বয়ষের অতিরিক্ত তারতম্য দূরিকরণ এবং স্ট্রিক আইনের মাধ্যমেই পরকীয়া
ব্যধি সমাজ থেকে হ্রাস করা সম্ভব।
লেখক
মোঃ আরিফ হুসাইন
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ,
উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়