মনের পিপাসা মেটাতে কোথায় না ছুটছে মানুষ আজ। কখনো সাদা মেঘের ভেলার সঙ্গে নিজেকে মেশাতে উঁচু পাহাড়ে, কখনো সমুদ্রের বিশালতাকে জানতে সমুদ্রের বুকে, কখনো বা অন্ধকারের অজানাকে জানতে প্রবেশ করছে গভীর গুহায়।
‘গুহা’ শব্দটির সঙ্গে নানা রহস্য জড়িয়ে আছে। কারো কাছে গুহা মানে ভয়ের কিছু, কারো কাছে এটি হলো প্রকৃতির অন্যতম রহস্য।
আমরা হয়তো অনেকেই গুহা সম্পর্কে কিছুটা শুনেছি। স্বভাবতই গুহা অন্ধকার। একবার ভেবে দেখুন তো, কোনো এক অন্ধকার গুহায় আলোক মশাল নিয়ে আলোর যাত্রী হয়ে গুহার মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন আর আপনার পা ছুঁয়ে বয়ে যাচ্ছে শীতল পানির প্রবাহ। কখনো মাথা উঁচু করে, কখনো বা মাথা নিচু করে হেঁটে চলছেন আপনি। তাহলে কেমন লাগবে আপনার, ভাবুন তো। সে এক অদ্ভুত ভালো লাগা। গুহাটি থেকে বের হয়ে আপনার মনে হতে পারে অন্য এক অজানাকে জেনেছেন আপনি।
এমন এক অজানা অনুভূতিকে অনুভব করতে ঘুরে আসতে পারেন রাংগুনিয়ার বাদুরের গুহায়।
চট্টগ্রামের রাংগুনিয়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়ন এর রাজারহাট থেকে প্রায় ৪ কি:মি: গাড়ীতে গিয়ে আরো প্রায় ১০-১২ কি:মি: দুর্গম পথ পায়ে হেটে রহস্যময় বাদুরের গুহা অবস্থিত।
গুহাটির বাদুরের গুহা কেন? তার কোনো নিদিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় নি।তবে স্থানীয়রা মনে করেন এখানে আগে বাদুরের বাসস্থান ছিল বলেই এটার নাম বাদুরের গুহা।
কি আছে ঐ বাদুরের গুহায় চলুন জেনে নেয়া যাক।
আর কিভাবে যাওয়া যায় সেই গুহায়?
যারা অ্যাডভেঞ্চার ভ্রমন পছন্দ করেন তাদের জন্য এক রোমাঞ্চকর স্থান বলা যায়।
গাড়ী থেকে নেমেই শুরু হয়েছিল আমাদের সুউচ্চ পাহাড় বেয়ে উঠা।পাহাড়টি বেয়ে উঠতে চুড়ায় যেতে সময় লেগেছিল প্রায় ২০ মিনিট মতো।তারপর পাহাড়ের চুড়ায় হাটতে হাটতে দেখা হয়েছিল প্রায় ৩-৪ দল কাঠুরের সাথে।কাঠুরে না বলে কাঠুরের দল বলারও রহস্য আছে।প্রায় সব দলই সাজেষ্ট করেছিল হাতি থেকে সাবধান থাকতে।
হ্যা, বন্য হাতি।
এজন্যই কাঠুরেরা দলবদ্ধ হয়ে কাঠ কাটতে যায়।
পাহাড় থেকে নামলেই দেখা মিলতে পারে বন্য হাতির ঝাক।
যদি হাতি সামনে পড়ে যায় মোকাবেলা ততটা সহজ নয়।
হয়তো সাহস নিয়ে লোকসংখ্যা বেশি থাকলে দলবদ্ধ ভাবে দাড়াতে হবে নতুবা দৌড়ানোর মতো শক্তি থাকলে জোরে পালাতে হবে।হাতি যদিও খুবই শক্তিশালি তবুও মানুষের মতো দৌড়াতে পারে না।
পাহাড় থেকে নেমেই আমরা হাতি দেখিনি ঠিক কিন্তু ইয়া মস্ত বড় বড় হাতির পায়ের চিহ্ন গুলো দেখলেই ভয় লাগে।
আরো কত প্রাণীর পায়ের চিহ্ন যে দেখা মিলে বলা মুশকিল।
অবশ্য যেদিন গিয়েছিলাম স্থানীয়রা বিরাট এক পাহাড়ী মহিষ ধরে ছিল বন থেকে।
উহ বলা হয় নি ১০০০-১২০০ ফুট সুউচ্চ পাহাড় থেকে চারপাশের ভিউ টা দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়।বিভিন্ন পাহাড়ী ফল-ফলাদি লতা পাতায় ঘেরা যেন এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি।
সচ্ছ শীতল পানির খাল দিয়ে হাটতেই যেন কেমন কেমন।
প্রায় ৪০ মিনিট মতো পানিতে হাটতে হাটতে পৌছলাম গুহায় কাছে।
গুহার মুখে যাওয়া আরো কিছুটা বাকী!
ভয়টা এখানেই,
আমি প্রথমে এখান থেকেই চলে আসছিলাম, পরে যখন কয়েকজন পথটা অতিক্রম করলো একটু ভরসা পেলাম।
মানে যে পথ দিয়ে যেতে হবে গুহার উপর দিয়ে নিচে হবে প্রায় ১০০০ ফিট আর উপরে পাহাড় প্রায় ১০০০ ফিট মাঝখানে ১ ফিট মতো একটা রাস্তা।
এটা পাড়ি দিলেই গুহার মুখ দেখা যাবে।
কতটা দু:সাহসিকতা সাথে এটা যে পাড়ি দিতে হয় আল্লাহ মালুম!
যারা শারিরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল ভুলেও এই পথের যাত্রী হতে যাবেন না।
একদিকে পাহাড়ী রাস্তা ও খাল অন্যদিকে বন্য পশুর বিপদ।
এবার মশাল নিয়ে যাত্রা শুরু!
গুহার ভিতরটা এতটাই অন্ধকার যে মশাল ছাড়া যাওয়া অসম্ভব।
উহ হ্যা,মশালের জন্য গুহার আশেপাশে কোনো বাশ পাওয়া যাবে না,পথিমধ্যে থেকেই বাশ সংগ্রহ করতে হবে।এবং মশালের জন্য প্রয়োজনীয় কাপড় ও কেরোচিন বাজার থেকে নিয়ে যেতে হবে।যাওয়ার সময় অবশ্যই দা ও ম্যাচ নিতে ভুল করা যাবে না।
গুহার নিচ দিয়ে শীতল পানিতে পাওয়া যায় আঙ্গুলে আকারের চিংড়ি আরো কত রকম ছোট মাছ।
যেতে যেতে প্রায় ৩৫০ ফুট ভিতরে গিয়ে গুহার উচ্চতা প্রায় ৩-৪ ফিট এ চলে আসে ভিতরে গেলে হামাগুড়ি দিয়ে যেতে হবে।
অবশ্য কয়েকজন গিয়েছিল আরো দূর প্রায় কিন্তু আজ পয়ন্ত শেষ প্রান্তে কেউ যেতে পারে নাই।গুহার দেয়ালের মাটিগুলো কোথাও লাল কোথাও কালচে আবার কোথাও বাদামী রংয়ের।মাটিগুলো এতটাই শক্ত ইস্পাতের দা দিয়ে কুপানো যাচ্ছে না।পাথরের ন্যায় বলা চলে।গুহার তল দিয়ে চলন্ত পানিগুলো কোথায় যাচ্ছে কোনো সন্ধান খুজে পাইনি।তবে গুহার পাহাড়টি বিপরীত পাশে ৪’-৬’ ফুট মতো একটা সুরঙ্গ থেকে পানি বের হতে দেখা গেছে।সম্ভবত এটাই সেই রহস্যময় গুহার শেষ প্রান্ত কেননা আস্ত একটা বাশ ঐ সুরঙ্গে ঢুকিয়ে দেখছি কোনো কূল পাওয়া যায় নি।
এটা বাংলাদেশের সবচেয়ে রহস্যময় ও দীর্ঘ গুহা বলা যায়।
অনেকের প্রশ্ন জাগতে পারে এটা এত বড় গুহা হলে কেন এত বছর প্রচার হয় নি।
প্রশ্নটা আমারও।
দূর থেকে যারা আসতে চান তাদের জন্য পথ নির্দেশনাঃ
চট্টগ্রাম শহর-> বাস/অটো যোগে কাপ্তাই সড়ক হয়ে রাংগুনিয়া গোডাউন->অটো যোগে পদুয়া
পশ্চিম খুরুশিয়া চিপছড়ি এখানে গাড়ী থামবে।আর গাড়ী যাওয়ার সুযোগ নেই এবং প্রায় ১০ কি:মি: পথ কোনো স্থানের নামকরণ এখনো হয়নি।তাই ভ্রমন করতে চাইলে পূর্ব অভিজ্ঞ কাউকে সঙ্গে নিতে হবে।
মুহাম্মদ নুরুল আজিম
রাংগুনিয়া,চট্টগ্রাম।
অসাধারণ হইছে, আপনাদের অভিজ্ঞতা। আমরা ও যেতে চাই, যদি আপনি আমাদেরকে সাথে নিয়ে যান। ধন্যবাদ