উত্তরবঙ্গের সাধারন জনগণ সবসময়ই ছিলেন উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত। সেই সুবিধা বঞ্চিত সাধারণ মানুষের জন্য যখন ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর তারিখে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হলো তখন থেকে সাধারণ মানুষের কাছে হয়ে উঠল একমাত্র আশার আলো যা তাদেরকে অশিক্ষার অন্ধকার থেকে বের করে নিয়ে যাবে আলোর পথে। কিন্তু সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হচ্ছিল দূরদর্শী এবং সময়োপযোগী চিন্তাধারা সম্পন্ন যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির এ দুঃসময়ে ২০১৭ সালের ১৪ জুন উপাচার্য হয়ে আসেন প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও স্যার। তিনি প্রথমেই বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করেন এবং দ্রুত সমাধান করার লক্ষ্যে দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে চলেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক, শিক্ষার্থী কর্মচারীবৃন্দের যাতায়াতের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করার অভিপ্রায়ে তিনি বাস, মাইক্রোবাস কেনার ব্যবস্থা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভার্চুয়াল ক্লাসরুম চালু করেছেন। প্রতিনিয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয়ের উপর সেমিনার আয়োজন করার ব্যবস্থা করেছেন যা শিক্ষক, শিক্ষার্থী সবার জন্যই কল্যাণকর। সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ওয়াই-ফাই এর ব্যবস্থা করেছেন যাতে করে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে না পরে। সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়কে ইন্টারনেট এর আওতায় আনা একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত যা কিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে জড়িত সকলের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা বৃদ্ধিসহ গবেষণার উন্নয়নে ব্যাপক সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করেছে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়টির একটি বড় সমস্যা ছিল সেশনজট। রসায়ন বিভাগে এই সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছিল কারণ এখানে জৈব, অজৈব এর ভৌত রসায়নের ব্যবহারিক ক্লাস নেওয়ার জন্য মাত্র একটি ল্যাবরেটরি, যা প্রফেসর ডক্টর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও স্যার এর নজরে বিষয়টি আনলে তিনি দ্রুতই আরো দুটি ল্যাবরেটরি তৈরির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।
এতে করে আগামী বছরগুলোতে সেশনজট আর থাকবে না বলেই আমরা মনে করি। এছাড়া রসায়ন বিভাগের ল্যাবরেটরি পরিচালনা ও কেমিক্যাল কেনার উদ্দেশ্যে যথেষ্ট পরিমান অর্থ তিনি বরাদ্দ দিয়েছেন। রসায়ন এর ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর টিআইসিআই এ একটি প্রশিক্ষণ নিতে যায়, স্যার তাদের এই প্রশিক্ষণের খরচও বহন করার ব্যবস্থা করেছেন।
এবছরও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের জন্য স্যার নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। ছাত্রীদের শেখ হাসিনা হল নির্মানের কাজ পুনরায় চালু করেছেন। উন্নত গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ এন্ড ট্রেইনিং ইনস্টিটিউট এর নির্মান কাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরের যোগাযোগ সুবিধার জন্য সড়কগুলো পাকা করেছেন। গাড়ি পার্কিং করার ব্যবস্থা করেছেন। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি বিএনসিসি ও রোভার স্কাউট কার্যক্রম ও নিয়মিত খেলাধুলার আয়োজন করে ক্যাম্পাসকে প্রাণবন্ত ও গতিশীল করেছেন। নারীরা যেন পিছিয়ে না থাকে, খেলাধুলায় তারাও যেন সমান সুযোগ পায় তাই প্রমীলা ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টনসহ নানাবিধ খেলার আয়োজন করা হয়েছে। শুধু তাই নয় নারীদের আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
প্রশাসনিক কাজের স্থবিরতা দূরীকরণের লক্ষ্যে তিনি ডিজিটাল ব্যবস্থা যেমন আইসিটি সেল গঠন, স্টোর ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার স্থাপন, সিসি ক্যামেরা, ই-ফাইলিং, ই-টেন্ডারিং চালু করেছেন যা বেরোবি, রংপুরকে সকল বাঁধা অতিক্রম করে সামনে নিয়ে যেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
সর্বোপরি বেরোবি,রংপুরকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে স্যার এর অবদান বলে শেষ করা যাবে না। রেরোবি, রংপুরকে সামনে এগিয়ে নিতে তিনি যুগোপযোগী উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করেছেন।
স্যারের মত একজন অভিজ্ঞ , বিচক্ষণ মননশীল মানুষের সান্নিধ্যে এসে নিজেকে অত্যন্ত ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। আমি স্যারের সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর জীবন কামনা করছি সেই সাথে আমাদের প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয় বেরোবি, রংপুর যেন প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে সেই আশা ব্যক্ত করছি।
সালমা বেগম
প্রভাষক,
রসায়ন বিভাগ,
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়,
রংপুর।
ও সদস্য,
নবপ্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ, বেরোবি, রংপুর।