ভালবাসা এবং সৌন্দর্য শব্দ দুটি যেমন ছোট এর তাৎপর্য তেমনি বিশাল। সকলেই নাকি সুন্দরের পূজারী তাই বলতে শোনা যায় ”আগে দর্শনধারী পরে গুণ বিচারী ” বাক্যটিতে শুধুমাত্র বাহ্যিক সৌন্দর্যের কথায় ফুটে উঠেছে।
আসলেই কি তাই!!!!
সবার চোখে কিংবা মস্তিষ্কে একই রকম জিনিস সুন্দর মনে হবে তা কিন্তু নয়। আমি যেভাবে এর ব্যাখ্যা দেব আপনি হয়ত তার সাথে একমত নাও হতে পারেন আবার আপনার চিন্তার সাথে অন্যের চিন্তা নাও মিলতে পারে ।একেক জনের চোখে সৌন্দর্য্য এবং ভালবাসা একেক রকম।
সদ্য মা হওয়া এক সুখী মহিলা জানতে পারলেন তার একটি ছেলে হয়েছে।
আমি কি আমার ছেলেকে কোলে নিতে পারি?’ ডাক্তারের কাছে জানতে চাইলেন। কিন্তু যখন তিনি তার সন্তানকে কোলে পেলেন তার চোখ ফেটে এল জল। তার শিশুটি যে আর সবার মত স্বাভাবিক না। শিশুটি জন্ম নিয়েছে দুটি কান ছাড়াই।
এভাবে দিন,মাস,বছর গেল। দেখা গেল যে কান না থাকলেও ছেলেটি সবার মতই স্বাভাবিকভাবে শুনতে পায়। শুধু কান দুটির শারীরিক উপস্থিতি ছিল না।
একদিন স্কুল থেকে বাসায় এসে মায়ের কোলে পড়ে কাঁদতে থাকল ছেলেটি। ‘স্কুলে ছেলেরা আমাকে কানহীন দানব বলে ক্ষেপিয়েছে’, ছেলের কষ্টের কথা শুনে মাও কাঁদতে লাগলো।
হাতে গোনা কয়েকজন ভালো বন্ধু পেয়ে গেল সে, তাদের সাথেই থাকতো স্কুলের সময়টা। সাহিত্য আর মিউজিকে ক্লাসে আর সবার চেয়ে ভালোও করলো।
পারিবারিক ডাক্তার একবার একটি সুখবর নিয়ে আসলেন। তিনি বললেন যে, ছেলের কান তিনি প্রতিস্থাপন করতে পারবেন, যদি কোনো সুস্থ মানুষের দুটি কান তাকে যোগার করে দেয়া হয়।
অনেক খোঁজাখুজি করেও কাউকে পাওয়া গেল না কান দান করার জন্য। পুরো পরিবারের মন খারাপ। ছেলের মুখের দিকে তাকাতে পারছিল না বাবা-মা।অবশেষে একদিন বাবা ছেলেকে সুখবরটি দিলেন। একজনকে পাওয়া গেছে যে তার কানদুটি দান করতে রাজি হয়েছে, কিন্তু শর্ত একটাই তার পরিচয় গোপন রাখতে হবে।
নির্দিষ্ট দিনে অপারেশন হলো। ছেলে কান ফিরে পেল, দুনিয়াতে এত সুখী সে নিজেকে কোনোদিনই ভাবেনি।
কিন্তু কার অবদানে সে আজ সুখী? এটা যে তাকে জানতেই হবে। তাকে একটা ধন্যবাদও যদি না দিতে পারে তাহলে যে তার জীবনই ব্যর্থ। কিন্তু বাবা জানাতে রাজী নয়।
ছেলেটি খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিল, শর্ত দিল, তাকে সেই মহানুভব ব্যাক্তির সাথে দেখা না করালে সে খাবে না। বাধ্য হয়ে তার বাবা তাকে জানাতে রাজী হলো।
সেই দিনটি ছিল ছেলের জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন। বাবা তাকে তাদের বেডরুমে নিয়ে গেল এবং তার মায়ের ঘন কালো চুলগুলো দুহাত দিয়ে সরিয়ে দিল। ছেলেটি দেখলো যে তার মায়ের কানদুটি নেই।
ছেলেটি অঝরে কাঁদতে লাগলো, ‘কিন্তু মা, কোনোদিন নিজের এক টুকরো চুলও কাটতে দাওনি তুমি।’
আসলে প্রকৃত সৌন্দর্য বাহ্যিক নয়, প্রকৃ্ত সৌন্দর্য থাকে হৃদয়ে এবং এটিই জীবনের প্রথম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রকৃত ভালবাসা একটি মানুষের। যেটা কেউ বুঝতে পারে কেউ পারে না। আবার কেউ বুঝতে পারলেও অবহেলা করে যার জন্য কিছু বাব-মা এর জায়গা হয় বৃদ্ধাশ্রম এ।
প্রকৃত ভালবাসা এবং সৌন্দর্য দুটিই মানসিক, বাহ্যিক ক্ষনিকের মাএ।
রিয়াজ হোসাইন
হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
mddirazsheik909@gmail.com