কিছুদিন ধরে নিউজফিড স্ক্রল করলেই দেখতে পাচ্ছি একটাই নিউজ ধর্ষণ! ধর্ষণ! ধর্ষন!নোয়াখালতে ধর্ষণ, সিলেটে ধর্ষণ ওমুক জায়গায় ধর্ষণ, তমুক জায়গায় ধর্ষণ।আমি অতি উৎসাহিত হয়ে গুগলে সার্চ দিলাম।রেজাল্ট দেখে আমি রীতিমতো অবাক।এতো এতো ধর্ষণ।কেনোইবা পার পেয়ে যাচ্ছে ধর্ষকরা । আবার এদিকে কলামিস্টরাও কিন্তু বসে নেই। লিখেই যাচ্ছে। তাদের কল্যাণে এসব খবর প্রত্যান্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।শুধু কি কলামিস্টরাই লিখতেছে?না। মোটামুটি ফেসবুক জ্ঞান যাদের আছে তাদের সবাই সোচ্চার বিষয়টা নিয়ে।এছাড়া দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। বিচার চায়,ফাঁসি চায়।কত আবেগ সেখানে।যেন সবাই ধোয়া,তুলসি পাতার ন্যায় পূত পবিত্র। সব মেয়ে জাতী তখন মায়ের জাত হয়ে যায়।
চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বাজার পর্যন্ত, সরকার থেকে শুরু করে জনগণ পর্যন্ত,নেতা থেকে শুরু করে কর্মী পর্যন্ত ছাত্র,আলেম, শিক্ষক পুরোহিত সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে দাবি ওঠে। রাস্তাঘাট গরম হয়। সবার একটাই দাবি ধর্ষকের ফাঁসি চায়।
আন্দোলনকারী আর ফাঁসি চাওয়া মানুষদের মধ্যে হয়তো এমন কেউ বাদ থাকে না শুধু মাত্র ধর্ষক ও তার একান্ত আপন মানুষগুলো ছাড়া।ধর্ষক ও তার দোসররা ছাড়া সবাই আন্দোলন করে।যদি ধর্ষণ গুরুতর,কোনো অপরাধ না হতো তাহলে হয়তো খুশির ঠেলায় তারাও বলে দিতো ধর্ষকদের শাস্তি হোক।সবাই তখন মানবতা চিনে। ধর্মের প্রতি অনুরাগী থাকে।
এখন আমার প্রশ্ন হলো ধর্ষণের ব্যাপারে মানুষ এতো পজেটিভ হলে বার বার ধর্ষণের পূণরাবৃত্তি হচ্ছে কেন?তখন তো সবাই হাতে হাত রেখে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিবাদ করছে।নিন্দা জানায়ছে।শাস্তি চাইছে।সবার তখন মা বোনের সত্তা টা অনুভব হতো।তাহলে এখন ধর্ষকরা আবার কোত্থেকে আসে।তাহলে কী তাদের বোধ শক্তি বিলোপ পাইছে।এমন তো নয় যে একজন ধর্ষক বার বার ধর্ষণ করতেছে।তাহলে?
এর উত্তর টা আমি বলার চেষ্টা করতেছি। আসলে কবিরা ঠিকই বলে গেছেন। বাঙালী জাতি আবেগি জাতি। অতিরঞ্জন, অতি উৎসাহিত হওয়া এগুলো আমাদের স্বভাব বৈশিষ্ঠ্য।মজ্জাগত দোষ।আবেগের ঠেলায় আমরা অনেক কিছু বলতে পারি কিন্তু আদতে তার ছটাকও করতে পারি না।যদি পারতামই বা তাহলে তো আর ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কন্ঠস্বরগুলোই কি ধর্ষণ করতে পারে?
এই ধর্ষকগুলো কারা?হয়তোবা আমাদের কারো না কারো ভাই, বন্ধু, মামা,চাচা,বাবা,খালু আত্মীয়স্বজন,পাড়া প্রতিবেশী, মহল্লাবাসী।এর চেয়ে বেশি না।এখন আমি ধর্ষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার কিন্তুু দেখা গেল পরে আমার ছেলে বা পরিবারের কেউ ধর্ষণ করে বসে তাহলে কি হলো আমার জাগরণে? আমার প্রতিবাদ কি আবেগ ছিলো? নাকি বিবেক?নাকি অতিরঞ্জন? যদি বলা হয় আমার উদ্দেশ্য সৎ ছিলো?ঠিক আছে মেনেই নিলাম সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিবাদ করছে তাহলে তার ঘরে কেন ধর্ষক?তার সমাজ মহল্লা,আত্মীয়স্বজনে কেন? ভুলটা কোথায় ছিলো?কেনো সচেতনতা আপনার ঘর থেকে শুরু করা হলো না।প্রতিবাদ আগে নিজের ঘর দিয়ে শুরু করা ভালো।আপনি সচেতন হলেই যথেষ্ট। আপন ভালো তো জগত ভালো।
আসলে আমরা অন্যের দোষ দেখি নিজের দোষ দেখি না,অন্যের সমালোচনা করি নিজেকে সংশোধন করি না।আমরা নিজের ভুল স্বীকার করি না অন্যের ভুল নিয়ে লাফালাফি করি।আমরা প্রতিবাদ করি ঠিক আছে কিন্তুু তা নিজের জন্য প্রযোজ্য নয়।প্রতিবাদ রাস্তায় গিয়ে,ব্যানার দিয়ে,রিপোর্ট করে কিংবা মিছিল করে করতে হয় না।যার যার অবস্থান থেকে তার ফ্যামিলি তে বুঝালে এর প্রভাব শাস্তি ভয়াবহতা সম্পর্কে অবগত করলে সেই সাথে পরিবারের অবস্থানের কথা বলে দিলেই তো শেষ।প্রত্যেক মানুষ পারিবারিক সম্পর্কে আবদ্ধ।তাই প্রতিবাদ এখান থেকে শুরু করার চেয়ে উত্তম পন্থা আমি দেখতেছি না।কিন্তু আমরা তা পারি না পারি শুধু কিছুদিন লাফাতে।আরে ভাই খোঁজ নিয়ে দেখেন বিগত দিনে প্রতিবাদ করা যুবকটিও আজকের ধর্ষক।তাহলে তো যে লাউ সে কদু।
এখন আসি বিচার বিভাগের ভুমিকায়।ধর্ষণ হচ্ছে নিয়মিত।কিছু উকিল লাভবান হচ্ছে।কিছুদিন হৈচৈ দেখে পুলিশ ধর্ষক কে গ্রেফতার করতেছে আইনের নিকট সৌপর্দ করতেছে তারপর কিছুদিন পর দেখা গেলো জামিনে মুক্তি।আর বছর কয়েক পর শোনা গেল সাধারণ ক্ষমা তাও আবার ধর্ষককে।বিচার বিভাগের এই হীনমন্যতা আর দুর্বলতা দিন দিন ধর্ষণ কে উষ্কে দিচ্ছে। বুঝা যাচ্ছে বিচার বিভাগে গাবলা আছে অথবা প্রচলিত আইন বর্তমানের জন্য যথেষ্ট নয়।যদি বলেন আইনের কি বুঝেন আপনি।কথাটা ভুল বলেন নি।আমরা আইন বুঝি না ঠিক আমরা সাধারণ মানুষ ধর্ষণ যে ভয়ংকর রকমের একটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ সেটা বুঝি। আপনার সৃষ্ট আইন যখন ধর্ষণ রোধে সহায়ক হচ্ছে না তাহলে আপনার আইনের প্রতি আমরা কিভাবে আস্থা রাখবো।
৯৫%মুসলমানের দেশে কেন ধর্ষণের শাস্তি কোরআন অনুযায়ী হচ্ছে না।কেন তাদের জনসম্মুখে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা হয় না।কেন আইনের এতো তড়িঘড়ি।বিচার বিভাগ কি স্বাধীন নাকি কোনো মহল দ্বারা প্রভাবিত।পরাধীন হলে কেনো আমরা স্বাধীনতা চাচ্ছি না। এসবের প্রশ্নের উত্তর কোথায়।
আর আমরা ধর্ষণ হওয়ার পর দেখতে পায় সব দল সব মহল এদের নিয়ে মন্তব্য দেয়, নিন্দা জানায়। তাহলে আবার আমরা ধর্ষণ বিরোধীরাই কেনো ওদের বাঁচাতে যায়।ওদের তো আর ভিন্ন গ্রহের কেউ এসে বাঁচায় না। কোথায় পায় ওরা উকিল।কে দেয় ওদের রাজনৈতিক সার্পোট।প্রতিবাদীগণই তো দেয় তাই না।তাহলে শুধুশুধু এতো ভন্ডামী করার কি ই বা দরকার ছিলো।বলে দিলেই হতো।”ধর্ষণ একটা স্বাভাবিক বিষয় আর নারীরা ভোগদ্রব্য।যে কেউ যেভাবে যখন ইচ্ছা ভোগ করতে পারবে।আর বাঁচিয়ে নেওয়া পালের গোদারা যখন তাদের আনুকুল্যে সিদ্ধান্ত নেওয়াতে পারে তাহলে তাদের তারা অবাধ ধর্ষণ নিয়ে আইন ও প্রয়োগ করানো যাবে
ধর্ষণের বিরুদ্ধে এতো হৈচৈ, এতো আন্দোলন, এতো লাফালাফি,মায়াকান্না করে কি,লাভ বলো যদি গাছের শিকড় নরম হয়?তার চেয়ে সবাই মিলে একটা কাজ করলে মন্দ হয় না ধর্ষণের বৈধতা চায়।
সরকারের কাছে আমার একটাই আবদেন হয় ধর্ষকদের জনসম্মুখে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা হোক না হয় ধর্ষণের বৈধতা দিয়ে মানবতার বিপর্যয় ডেকে আনা হোক।তাও ভালো হবে দেশটা অন্তত এতো মিছে লাফালাফিতে সৃষ্ট অশান্তি থেকে বাঁচবে।কারণ রাষ্ট্রের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় না থাকলে উন্নয়ন ব্যাহত হয়।জীবনমান নিচুতে নামে।যদিও নিরাপত্তাহীনতার চেয়ে জীবন মান বড় নয়।
আর ধর্ষণ রুখতে হলে আইনের যথায়থ প্রয়োগ চাই সেটা হোক ভীতি প্রদর্শণমূলক আর দৃষ্টান্তমূলক যাতে কেউ দ্বিতীয় বার একাজ করার সাহস না পায়।ওদের প্রতি মানবতা মানে সকল মানবতার প্রতি চরম অবমাননা।
“ধর্ষণ রুখতে হলে! “
“মুহাম্মাদ ফয়সাল উদ্দীন”