মুসলিম বিশ্বে যুগে যুগে অনেক সুফী সাধক, ইমাম ও মুজাদ্দিদের আগমন হয়েছে। তেমনি একজন মহান মনীষীর নাম খাজা আহমেদ ইউসেভি রা। তাহার জন্ম ১১ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, মধ্য এশিয়ার সায়রাম নামক স্থানে বর্তমানে দক্ষিণ কাজাখাস্তান।
খাজা ইয়েসেভি মাত্র ৭ বছর বয়েসে তার বাবাকে হারান, এর পর আরসালান বাবা তার দেখাশোনার করেন। আরসালান বাবা ছিলেন তৎকালীন একজন সুফী সাধক। খাজা ইয়েসেভি আরসালান বাবার নিকট থেকে তিনি সুফী জীবনের অত্যন্ত উচ্চস্তরের জ্ঞানার্জন করেন।
পরবর্তীতে তিনি বুখারায় চলে যান, সেখানে তিনি শায়খ ইউসুফ হামাদানীর নিকট পড়াশোনা শিখতে থাকেন। ইউসুফ হামাদানীর সংস্পর্শে থেকে তিনি তাফসীর, হাদিস ও ফিকাহ এর উপর জ্ঞানার্জন করেন। এবং শায়খ ইউসুফ হামদানির খুব নিকটতম শীর্ষে পরিনিত হন।
শায়খ ইউসুফ হামাদানীর আদেশে তিনি মধ্যে এশিয়ার বিভিন্ন শহরে ভ্রনণ করেন এবং ইসলামের ইসলামের আলো ছড়িয়েছেন। একসময় তিনি নকশবন্দী তরিকার প্রধান মুর্শিদের দায়িত্ব পান এবং কিছু সময় পর এই দায়িত্ব আব্দুল খালেক ঘযদ্বাণী নামক একজন কে তিনি তুর্কিস্থানে চলে যান, সেখানে তিনি ইসলাম প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
আহমদ ইয়াসাভি মধ্য এশিয়া জুড়ে ইসলাম প্রচারের জন্য যথেষ্ট অবদান রেখেছেন। এবং এই অঞ্চলে তাহার অসংখ্য শিক্ষার্থী তৈরী করেছিলেন ছিলেন। ইয়াসাবির কবিতাগুলি মধ্য এশীয় তুর্কি সাহিত্যে মুসলিমদের মধ্যে কবিতার একটি নতুন ঘরানা তৈরি করেছিল। উনার কবিতা গুলো ইসলামী বিশ্বের বহু ধর্মীয় কবিদের প্রভাবিত করেছিল। বিভিন্ন দেশ থেকে মুসলিম শিক্ষার্তীরা দলে দলে তাহার নিকট এসেছিলো সাহিত্য শেখার জন্য।
৬৩ বছর বয়সে তিনি দুনিয়াবী সব কিছু থেকে অবসত গ্রহণ করেন। এর পর তিনি মাটির নিচে গর্ত করে সেখানে বাকি জীবন অতিবাহিত করেছেন। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ছিল তার অনেক ভালোবাসা, আমাদের যেহেতু ৬৩ বছর দুনিয়ায় ছিলেন তাই তিনি রাসূল (দ.) এর চেয়ে বেশিদিন দুনিয়ায় থাকা উচিত মনে করেন নি। যার জন্য মৃর্ত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি ভুগর্ভেই ছিলেন।
ইসলামী ও সাহিত্য ছাড়াও উনার আরো বিভিন্ন বিষয়ে বিজ্ঞ ছিলেন, তিনি একজন দক্ষ কাঠমিস্ত্রী ছিলেন, কাঠ দিয়ে বিভিন্ন ঘরোয়া সামগ্রী তৈরী করে বাজারে বিক্রি করতেন এবং সেগুলো থেকে আয়কৃত অর্থ দিয়েই জীবন যাপন করতেন। একসময় উনার পীর ইউসুফ হামদিন উনাকে হামাদানী খানকার খলিফা হিসেবে বাগদাদ শহরে পাঠালেন। সেখানে যাওয়ার পর দায়িত্বরত ব্যক্তি উনার থাকা খাবার ব্যবস্থা করলেন এবং বললেন এর সমস্ত খরচ খানকার ফান্ড থেকে বহন করা হবে। তিনি তা ফিরিয়ে দিলেন এবং বললেন আমি একজন কাঠমিস্ত্রি,আমি কাঠমিস্ত্রি কাজ করেই তার থাকার খাবার ব্যবস্থা করে নিতে পারবো।
এটা বিশ্বাস করা হয় যে এক রাতে তৈমুর আহমদ ইয়াসাভিকে তার স্বপ্নে দেখেছিল, যেখানে ইয়াসাভী বুখারার আসন্ন বিজয়ের সুসংবাদ বলেছিলেন। এটি একটি চিহ্ন হিসাবে গ্রহণ করে, তৈমুর একটি প্রচারণা চালিয়েছিলেন যা সত্যই সফল হবে। তার বিজয়ের পরে, তিনি ইয়াসাবির সমাধিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং সেখানে একটি আড়ম্বরপূর্ণ সমাধি স্থাপনের নির্দেশ দেন।
আহমদ ইয়াসাভি কবিতা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁর কবিতাগুলি মধ্য-এশিয়ান তুর্কি ভাষায় একটি নতুন ধর্মীয় লোকসংস্কৃতি এনেছিল এবং প্রচুর কবিদের অনুপ্রাণিত করেছিল। আহমদ ইয়াসাভি কাজাখ উপত্যকায় শিক্ষার জন্য একটি কেন্দ্রও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যেখানে তিনি নিজে ৬৩ বছর বয়সে অবসর অবধি দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অবসর গ্রহণের পরে আহমদ ইয়াসাভি তাঁর অবশিষ্ট জীবন পুনর্বাসনে কাটিয়েছেন।
হাসান বাসরী ক্যান্তে বলেছেন যে বিখ্যাত কবি রুমিকে কোনিয়ে সেলজুক রাজা দ্বারা নিয়ে এসেছিলেন এবং আহমদ ইয়াসাভি একই সেলজুক আমলে ইসলামের সেবা করেছিলেন। তাদের সেবার প্রভাব এখনও অব্যাহত রয়েছে। এডওয়ার্ড ক্যাম্পবেল (আর্নেস্ট স্কট হিসাবে লেখা) আহমদ ইয়াসাভি খোয়াজাগানের উল্লেখযোগ্য সদস্য হিসাবেও লিখেছিলেন।
আহমদ ইয়াসাভি ১১৬৬ খ্রিস্টাব্দে মারা যান এবং তাকে কাজাখস্তানের তুর্কিস্তানে সমাহিত করা হয়েছিল। প্রথমত, সেখানে কোনও সমাধি নির্মিত হয়নি। তৈমুর এর (তৈমুর) আমলে প্রায় ২০০ বছর পর, ১৩৮৯ থেকে ১৪০৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তৈমুর তাঁর সমাধিতে একটি স্থাপত্যশৈলীর নকশা তৈরি করেছিলেন। ইউনেস্কো 2000 খ্রিস্টাব্দে এটিকে একটি ঐতিহাসিক কাজ হিসাবে গ্রহণ করেছিল। পরবর্তীতে আহমদ ইয়াসাবির মাজারটি তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের মাধ্যমে টি আই কে এ দক্ষতার দ্বারা মেরামত করা হয়েছিল। এছাড়াও, আহমদ ইয়াসাভি প্রতিষ্ঠিত আদেশ গুলো এখনও অনুসরণ করা হয় এবং ইয়াসাভি সাইয়্যিদ আতা শেখ বুখারা আদালতে বিশিষ্ট পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
এও জানা গেছে যে আহমেদ ইয়াসবির রচিত বই “ডিভান-ই-হিকমত” জ্ঞানের বই হিসাবে বলা হয় ( বুক অফ ইউসডম), কারণ এতে তাঁর লেখা অনেক তুর্কি কবিতা এবং তাঁর যুগের দরবেশদের কবিতাও রয়েছে।
১৯৯৩ সালে তুর্কিস্তানে মহান সুফী মরমী ও কবি আহমদ ইয়েসভির নামে প্রথম কাজাখ-তুর্কি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। যার নাম দেওয়া হয় আহমেট ইয়াসেভি বিশ্ববিদ্যালয়।
Source: https://aalequtub.com