সাড়ে ৫২ তুলা রুপা অথবা তার বিক্রয়মূল্য সমপরিমাণ টাকা অথবা নগদ টাকা ও রুপা মিলিয়ে সাড়ে ৫২ তুলা রুপার বিক্রয়মূল্যের সমান অর্থ কুরবানীর দিন গুলোতে (১০,১১,১২ জিলহজ্জ) কারো কাছে থাকলে তাকে কুরবানী করতে হবে। এই ফতোয়া আগের যুগের জন্য ঠিক ছিল, যখন সোনা রুপার দাম কাছাকাছি ছিল। সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ন ও সাড়ে ৫২ তুলা রুপার দাম সমান কিংবা কাছাকাছি ছিল যখন। এখন সাড়ে ৫২ তুলা রুপার বিক্রয় মূল্য মাত্র ৫৫ হাজার টাকার মত হবে। অপরদিকে সাড়ে ৭ ভরি ২২ ক্যারেট স্বর্ণের বিক্রয়মূল্য প্রায় ৪ লক্ষ টাকা বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী। ৫০-৫৫ হাজার টাকা এটা আজকাল বাংলাদেশের রিক্সাওয়ালা, সি এঞ্জি ওয়ালা, দিন মজুরের ঘরেও ১ বছর থাকে। ঢাকার অনেক ভিক্ষুক কিংবা পান সিগারেটওয়ালার কাছেও থাকে। সেও কি জাকাত দেবে? কুরবানি করবে? কারণ যার উপরে কুরবানীর দিনগুলোতে কুরবানী ওয়াজিব, সেই পরিমাণ অর্থ বছর শেষ পর্যন্ত থাকলে তার উপর জাকাতও ফরজ হয়। ৫০-৬০ হাজার টাকার মালিকেরা কি আসলেই জাকাত ও কুরবানী দেবে? ওরা তো জাকাত খায়। সেজন্য এখন ফুকাহারা বলছেন, সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ন বা তার বিক্রয় মূল্য সমপরিমাণ নগদ অর্থকেই একমাত্র নেসাব বা স্টেন্ডার্ড ধরতে, যা বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী কমবেশি ৪ লক্ষ টাকা। অথবা নগদ টাকা ও স্বর্ণ মিলিয়ে এই পরিমাণ যদি হয়। অন্যথায় গরিব মানুষ সমস্যায় পতিত হবে। ৫০,০০০ টাকা যার সেভিংস আছে এই যুগে সে আসলে ধনী না, গরীবই বর্তমান প্রেক্ষাপটে, কিংবা নিম্নবিত্ত, বর্তমান প্রচলিত ওরফে। গরিবের মেয়ে বিয়ে দিতেও ২ লাখ টাকা লাগে যেই জমানাতে।
মাসলাহা মুরসালাহ (সামগ্রিক কল্যাণ) উসুলের আওতায় পড়ে এই যুগের মুফতিগণের এই ইজতিহাদ। অন্যথায় নিম্নবিত্ত মানুষেরা গোনাহগার হবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ নিম্নবিত্তরা কখনোই জাকাত দেবে না কুরবানী করবে না৷ ওরা জাকাত দিলে কুরবানি দিলে কাকে জাকাত দেবে? কাকে কুরবানীর গোশত বিলাবে?
প্রচলিত অর্থে যাদেরকে ধনবান, সামর্থ্যবান বলে (নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিককে আসলেই আগের যুগে ধনবান সামর্থ্যবান বলে গণ্য করা হত) তার উপরই কুরবানী করা ওয়াজিব।
আমি বাস্তবতা থেকে বলি, আমার আম্মার কাছে গ্রামের অনেক রিক্সাওয়ালা, সি এন জি ওয়ালা কিংবা দিনমজুরের স্ত্রীরা এসে টাকা জমা রাখে। এদেরও বছরের সেভিংস ৫০-৬০ হাজার টাকা হয়।
এরা জাকাত ও কুরবানী দিলে আসলেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
হ্যাঁ, কেউ যদি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার সুন্নাহকে ভালোবেসে কুরবানী করে তবে উত্তম হবে। এটা তাকওয়ার বহিঃপ্রকাশ হবে।
কিন্তু এরকম নিম্নবিত্তরা কি আসলে ধনী কিংবা সামর্থ্যবানের কাতারে পড়ে? এরাই তো জাকাত ও কুরবানীর গোশতের জন্য দৌড়াদৌড়ি করে এখানে ওখানে।
আর এতটুকু স্বর্ণ এতটুকু রৌপ্য থাকলে কুরবানী করতে হবে এটা কিন্তু আয়েম্মায়ে কেরামের ইজতিহাদ বা গবেষণা (সুন্নাহতে এই ব্যাপারে নির্দেশনা নাই আমি যতদূর রিসার্চ করেছি, কেউ পেলে আমাকে দেবেন প্লিজ উপকৃত হব)। জাকাতের নিসাবের উপর কিয়াস করে সামর্থ্যের এই স্টেন্ডার্ড ইজতিহাদ করে ফুকাহায়ে কেরাম বের করেছেন৷ কারণ সেই যুগে এতটুকু পরিমাণ সম্পদ থাকলে অথবা এর মিক্সার (স্বর্ণ মুদ্রা ও রৌপ্য মুদ্রা মিলিয়ে নিসাব পরিমাণ হলে) সমপরিমাণ অর্থ থাকলে তাকে ধনী বা সামর্থ্যবান হিসেবে গণ্য করা হত।
কাজেই এখন, সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ন বা তার বিক্রয় মূল্য সমপরিমাণ নগদ অর্থ, যা বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী কমবেশি ৪ লক্ষ টাকা। অথবা নগদ টাকা ও স্বর্ণ মিলিয়ে এই পরিমাণ যদি হয় কুরবানীর দিনগুলোতে, কোন প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম সুস্থ মস্তিষ্কের নরনারীর কাছে থাকে, তবে তার জন্য কুরবানী করা ওয়াজিব। আর এই পরিমাণ অর্থ কারো কাছে ১ বছর অতিবাহিত হলে বছর শেষে ২.৫% জাকাত হিসেবে দিতে হবে। যদি তার ঋণ না থাকে। যুক্তিসঙ্গত ঋণ থাকলে জাকাত ও কুরবানী আবশ্যক হয় না। ধরুন হিসাব করে দেখা গেল ঋণ আদায়ের পর হাতে থাকা নগদ সম্পদ নেসাব পরিমান হয়, তবে তাকেও জাকাত- কুরবানি দিতে হবে।
আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক অবগত।
কৃতঃ সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া আজহারী