ইসলামের প্রাথমিক যুগে আশুরার রোজা ফরজ ছিলো। দ্বিতীয় হিজরি সনে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার বিধান নাজিল হলে আশুরার রোজা নফল হিসেবে বিবেচিত হয়।
আশুরা দিবসে রোজা পালনের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “রমজানের পর সর্বাধিক উত্তম রোজা হলো মহররম মাসের রোজা।
আর ফরজের পরে সর্বাধিক উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ।” (সহিহ মুসলিম)। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়িশা (রা.) বলেন, “জাহেলি যুগে কুরাইশরা আশুরার দিনে রোজা পালন করতো।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও সে সময় রোজা পালন করতেন। মদিনায় এসেও তিনি রোজা পালন করতেন এবং অন্যদেরও নির্দেশ দেন।
রমজানের রোজার আদেশ নাজিল হলে আশুরার রোজা শিথিল করা হয়। এখন কেউ চাইলে তা পালন করুক, আর চাইলে তা বর্জন করুক।” (সহিহ বুখারি)।
মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, “রমজানের রোজার পর মহররম মাসের রোজা আল্লাহতায়ালার কাছে সবচেয়ে বেশি ফজিলতময়।” (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)।
এভাবে হাদিসের প্রায় সব কিতাবে মহররম মাসের ফজিলত এবং এ মাসের ১০ তারিখ আশুরার রোজা সম্পর্কে রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত একাধিক হাদিস রয়েছে।
১০ মহররম আশুরার দিনে রোজার ফজিলত প্রসঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “এ আশুরার দিন রোজা রাখার কারণে আল্লাহতায়ালা বান্দার বিগত এক বছরের গুনাহসমূহ মাফ করে দেন।” (সহিহ মুসলিম ও মুসনাদে আহমদ)।
মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা অনুযায়ী আশুরার রোজা রাখার সময়টি ঘনিয়ে এসেছে। ১০ মহররম আশুরার দিন ঠিক রেখে আগের কিংবা পরের দিন মিলিয়ে ২ দিন রোজা রাখা উত্তম। সে হিসেবে এ বছর চাইলে ২৯-৩০ আগস্ট শনি ও রবিবার রোজা রাখা যায়। আবার চাইলে ৩০-৩১ আগস্ট রবিবার ও সোমবার রোজা রাখা যায়। তবে আশুরার রোজার বিধান প্রসঙ্গে ওলামায়ে কিরামের অভিমত হলো, কেউ যদি শুধু মহররম মাসের ১০ তারিখ রোজা রাখেন এবং এর আগে বা পরে একটি রোজা যোগ না করেন, তবে তা মাকরূহ নয়; বরং এতে মুস্তাহাব বিঘ্নিত হবে।
প্রকৃত সুন্নত হলো, আগের ৯ মহররম বা পরের দিনের সঙ্গে ১১ মহররম মিলিয়ে মোট ২ দিন রোজা রাখা। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা মহররমের নবম ও দশম দিবসে রোজা রাখো।” (জামে তিরমিজি)। তবে যে এ আশুরার দিন রোজা রাখতে পারল না, তার জন্য কোনো সমস্যা কিংবা আশাহত হওয়ার কিছু নেই।
আবার কেউ যদি যদি মহররমের ৯, ১০ এবং ১১ তারিখ মোট ৩ দিন রোজা রাখেন তবে তা সর্বোত্তম হিসেবে গণ্য হবে। ইমাম ইবনুল কাইয়ুম (রহ.) এ মত উল্লেখ করেছেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুসলিম উম্মাহকে আশুরার এ রোজা পালনের মাধ্যমে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন!
লেখক
মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী আলেম,
প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক
ই-মেইলঃ hashemy1984@gmail.com
nice article